![]() |
Advertisement |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল ( ১৯৭২-১৯৭৫ ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । স্বাধীনতা ঘোষণার প পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে ঢাকা থেকে পশ্চি পাকিস্তানে নিয়ে যায় । মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন । পাকিস্তান সরকা তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সামরিক আদালতে বিচারকাজ শুরু করে । প্রহসনের বিচারে তাঁর বিরুে ফাঁসির রায় দেয়া হয় । ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পরেও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে কারাগারে বন্দী ছিলেন । তিনি বেঁচে আছেন কি - না তাও দেশের মানুষ জানত না । বঙ্গবন্ধুর জন্য উদ্বে উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত ছিল সারা দেশের মানুষ । অধীর অপেক্ষা , কবে আসবেন বাঙালি জাতির মহান নেত অবশেষে ১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলেন । বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের গুরুত্ব ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন :
১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারি দেশে ফেরার আগে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সরকার বিশেষ বিমানে করে লন্ডন নিয়ে যায় । অতঃপর ব্রিটিশ রাজকীয় কমেট বিমানে দিল্লি হয়ে তিনি ঢাকায় আসেন । ঢাকায় মহান নেতাকে জানানো হয় অভূতপূর্ব অভিনন্দন । ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বঙ্গবন্ধু । নিজে কাঁদলেন , জনতাকেও কাঁদালেন । অবিসংবাদিত নেতার প্রতি জনগণের আবেগময় অভিনন্দন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত । পুরাতন বিমানবন্দর থেকে রমনা রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ জনতা উপস্থিত হয় প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার জন্য । রেসকোর্স ( সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের আশুকরণীয় ও নীতিনির্ধারণী বিষয়ে ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন । যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন , নবীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন । তিনি বলেন , ' বাংলাদেশ আদশ রাষ্ট্র হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থার ধরন কী হবে , এই সম্পর্কে তখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি । স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরদিনই ১৯৭২ সালের ১১ ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভায় দীর্ঘ আলোচনার পর ‘ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ ’ জারির মাধ্যমে দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করেন । ১২ ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন । একই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী । এই ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর গভীর আস্থার পরিচয় বহন করে । ১৯৭২ সালের ১২ ই জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত হয় । এই সরকার মাত্র তিন বছর সাত মাস তিন দিন দায়িত্ব পালনের সুযোগ পায় । এই স্বল্পতম সময়ে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বিধ্বস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করেন । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহ স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় । ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ।
উন্নয়ন , পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কার্যক্রম:
পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কঠিন দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করে সরকার । প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় রেড ক্রস সোসাইটি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির মাধ্যমে জেলা থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয় । বছরের শুরুতে পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য সরকারি হিসাবে মাসিক ভিত্তিক এক চাহিদাপত্র তৈরি করা হয় । এতে প্রতি মাসে খাদ্যের প্রয়োজন ছিল দুই লক্ষ থেকে আড়াই লক্ষ টন , সিমেন্টের চাহিদা।
ও অন্য অন্য খাদে উন্নয়ন করেন।
১.কৃষি উন্নয়ন।
২. শিক্ষা উন্নয়ন।
৩.সড়ক, রেল, ও বিমান যোগাযোগ উন্নয়ন।
সংবিধানের বৈশিষ্ট্য :
১৯৭২ - এর সংবিধান ছিল একটি লিখিত দলিল । বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সংবিধান রচিত হয় । তবে , বাংলাকে মূল ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয় । এই সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা , ১১ টি ভাগ , ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ এবং ৪ টি তফসিল ছিল । ২০৩ সংবিধানের প্রথম ভাগে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ , দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ , তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকারসমূহ , চতুর্থ ভাগে নির্বাহী বিভাগ , পঞ্চম ভাগে জাতীয় সংসদ , ষষ্ঠ ভাগে বিচার বিভাগ , সপ্তম ভাগে নির্বাচন , অষ্টম ভাগে মহাহিসাব নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রক , নবম ভাগে বাংলাদেশের কর্মবিভাগ কর্ম কমিশন , দশম ভাগে সংবিধান সংশোধন ও একাদশ ভাগে বিবিধ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে । ১. সর্বোচ্চ আইন : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হলো বাংলাদেশের সংবিধান । তাই সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না । সংবিধানে ঘোষণা করা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ । কেবল সংবিধানের অধীনে থেকে জনগণের পক্ষে সে ক্ষমতা প্রয়োগ করা যাবে । গলনীতি হিসেবে চারটি আদর্শকে।
১.সবোচ্চ আইন।
২.রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।
*গনতন্ত্র
*সমাজতন্ত্র
*ধমনিরপেক্ষতা
*জাতীয়তাবাদ
৩.মৌলিক অধিকার।
৪.এককেন্দ্রিক সরকার।
৫.মন্ত্রী পরিষদ।
৬.এক কক্ষ বিশিষ্ট আইন।
৭.স্বাধীন বিচার বিভাগ।
৮.সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন ঃ
১৯৭৩ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ ই মার্চ । বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর গণপরিষদ ভেঙে দেয়া হয় । স্বাধীনতা লাভের স্বল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার সাধারণ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গণতন্ত্রের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে । জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ ৩১৫ টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০৬ , জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জাসদ ) ২ টি , বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ১ টি এবং স্বতন্ত্র সদস্যরা ৬ টি আসনে জয়লাভ করেন । বঙ্গবন্ধুর ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় নির্বাচনী ফলাফল স্বাভাবিক বলেই জনগণ গ্রহণ করে । বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালের ১৬ ই মার্চ নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয় । রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন ১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারি দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয় । সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয় । এই সংশোধনী অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন । তিনি ইচ্ছানুযায়ী উপরাষ্ট্রপতি , প্রধানমন্ত্রী , মন্ত্রী এবং অন্যান্য সরকারি বিভাগের কর্মকর্তা নিয়োগ ও বরখাস্ত করতে পারবেন । এছাড়া বাংলাদেশের জন্য জাতীয়ভিত্তিক ও রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করা হয় । জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠনের পর।
১৯৭৫ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভেঙে দিয়ে 'বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নামে একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করে।এই দলের চেয়ারম্যান হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হলেন এম.মুনসুর আলী।
0 Comments: